ঢাকা: গুলশানের হলি আর্টিজেন বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জিম্মি ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ছয় হামলাকারীর মরদেহও। এছাড়া রাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)।
একই সঙ্গে এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কান নাগরিকসহ মোট ১৩জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।
শনিবার (০২ জুলাই) সেনা সদরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশন্স পরিদফতরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাইম আশফাক চৌধুরী অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে এ পরিসংখ্যান দেন।
তবে দুপুরের সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া ২০ জিম্মির সবাই বিদেশি বলা হলেও পরে লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে ওই বক্তব্য থেকে সরে আসে আইএসপিআর। সন্ধ্যা নাগাদ জানানো হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে সবাইকে বিদেশি মনে হলেও নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশি থাকার বিষয়টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাইম আশফাক চৌধুরী বলেন, অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ৬ জন নিহত হয়েছে। একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হযেছে। এছাড়াও অভিযান শেষে তল্লাশিকালে ২০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
‘যাদের সবাইকে গতরাতেই হত্যা করা হয়, যাদের অধিকাংশকেই ধারালো অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
ব্রি. জেনারেল নাইম আশফাক চৌধুরী বলেন, সরকার প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’ পরিচালনা করে। গতকাল (শুক্রবার) রাত থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে।
‘পরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবকে নিয়ে যৌথভাবে অপারেশন থান্ডার বোল্ট পরিচালনা করা হয়।’
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডোর নেতৃত্বে শনিবার সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে ১২-১৩ মিনিটেই ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
‘অভিযানের মাধ্যমে ৩ বিদেশি নাগরিকসহ ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৬ সন্ত্রাসী নিহত ও একজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া অভিযান শেষে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশই বিদেশি নাগরিক।’
ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ৪টি পিস্তল, একটি ফোল্ডেডবাট একে-২২, ৪টি অবিস্ফোরিত আইআইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান বি. জেনারেল আশফাক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রচলিত নিয়ম মেনেই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। তাদের পরিচয় নিশ্চিতের বিষয়ে কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রভোস্ট মার্শালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তার মোবাইল নম্বর ০১৭৬৯০১২৫২৪।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্যারাকমান্ডার ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. এম এম ইমরুল হাসান, পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির মুখপাত্ররা।